শিলিগুড়ি , ২৮ অগাস্ট : শিলিগুড়ির কলেজ মোড়ের ভিড়ভাট্টা তখন জমে উঠছে । আলো ঝলমলে মণ্ডপে বাজছে ঢাক । সেই ভিড়ের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসছেন কিছু অচেনা মুখ—চোখেমুখে অদ্ভুত কৌতূহল আর লুকোনো আনন্দ। কেউ হাঁটছেন লাঠির ভরসায় , কেউ বা হুইলচেয়ারে বসা । এক পাশে উচ্ছ্বাসে চিৎকার করছে কয়েকজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চা।
সাধারণ পুজোর দিনের ভিড় নয় , এ এক ভিন্ন দৃশ্য । এরা আসছেন বৃদ্ধাশ্রমের নীরব চার দেওয়াল পেরিয়ে , কেউবা মাটিগাড়ার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বিদ্যালয় থেকে । যাদের কাছে এতদিন পুজো মানেই ছিল দূর থেকে শোনা গান কিংবা টেলিভিশনের ঝলকানি , আজ তারাই দাঁড়িয়ে আছেন শহরের মাঝখানে উৎসবের রঙিন মেলায় ।
ডিফেন্স পার্টি গণেশ পুজো কমিটি এ বছর চতুর্থ বর্ষে পা দিল। থিম নয় , বাজেট নয়—তাদের চিন্তা ছিল একটাই , ‘ওদেরও তো পুজো বলে কিছু আছে ।’ তাই একসঙ্গে প্রায় পঞ্চাশ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে আনা হলো মণ্ডপে , দেওয়া হল নতুন শাড়ি ও পাঞ্জাবি। উপহার পেয়ে কারও চোখ ভিজে উঠল , কারও ঠোঁটে ফুটল শিশুর মতো সরল হাসি।
শুধু তাই নয়, শিশুদের জন্য সাজানো ছিল বিশেষ চমক। এক ঝলমলে দুপুরে হাতে তুলে দেওয়া হলো নতুন পোশাক, ভরপেট খাওয়ার আয়োজন , আর এক শিশুর জীবনে যুক্ত হলো নতুন হুইলচেয়ার—যেন হঠাৎ মুক্তির স্বাদ পেল তার পৃথিবী।
উদ্যোক্তারা জানান , তারা চান উৎসব শুধু সাজসজ্জায় সীমিত না হোক , মানবিকতার উৎসব হোক। বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে আসা মানুষগুলোকে যেমন সসম্মানে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন , তেমনি বললেন , আগামী বছর এই প্রচেষ্টা আরও বড় আকারে হবে ।