শিলিগুড়ি , ২৭ অক্টোবর : দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল আজ । ভেঙে যাওয়া দুধিয়া সেতুর স্থানে বিকল্প হিউম পাইপ সেতুর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে | সোমবার থেকেই সেই সেতুর উপর দিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হল । এর ফলে ফের সচল হয়েছে শিলিগুড়ি ও মিরিকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
গত ৫ অক্টোবর বালাসন নদীর উপর অবস্থিত ১৯৬৫ সালে নির্মিত দুধিয়া সেতুটি প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে পড়েছিল । সেতু ভেঙে যাওয়ায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মিরিক শিলিগুড়ি রুট । স্থানীয় বাসিন্দা , ব্যবসায়ী এবং পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। শিলিগুড়ি থেকে মিরিক যেতে যেখানে আগে সময় লাগত দেড় ঘণ্টা , সেখানে বিকল্প পথে ঘুরে যেতে হচ্ছিল তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত , তাও আবার অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ।
মানুষের এই দুর্ভোগে দ্রুত সাড়া দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । উত্তরবঙ্গে এসে পরিস্থিতি পরিদর্শনের পর তিনি নির্দেশ দিয়েছিয়েলন দুধিয়ায় অবিলম্বে অস্থায়ী সেতু তৈরি করতে হবে , যাতে মানুষের যাতায়াত স্বাভাবিক হয় । সেই নির্দেশের পর রাজ্য পূর্ত দপ্তর ও জলসম্পদ দপ্তরের যৌথ তত্ত্বাবধানে শুরু হয় বিকল্প সেতুর কাজ।
মাত্র ১৬ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে ৪৬৮ মিটার দীর্ঘ এই হিউম পাইপ সেতু । এতে ব্যবহার হয়েছে ১২০০ মিলিমিটার ব্যাসের ১৩২টি হিউম পাইপ , যার উপর গড়ে তোলা হয়েছে ৭২ মিটার দীর্ঘ কজওয়ে। সেতুর প্রস্থ ৮ মিটার, যাতে ছোট ও মাঝারি যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে।
রবিবার মুখ্যমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানান “দুধিয়ায় বিকল্প হিউম পাইপ সেতু নির্মাণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে , যা মিরিককে শিলিগুড়ির সঙ্গে সংযুক্ত করবে । সোমবার থেকেই এই সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে।”
তিনি পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক ও স্থানীয় প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন , “মাত্র ১৬ দিনে এই কাজ শেষ হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয় । এটি প্রমাণ করে , এই সরকার সংকটে মানুষের পাশে থাকে — কথায় নয় , কাজে।”
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন , পুরনো সেতুর স্থানে প্রায় ৫৪ কোটি টাকায় একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রকল্প ইতিমধ্যেই হাতে নেওয়া হয়েছে । পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকদের মতে , নতুন সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে এবং আগামী বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
অস্থায়ী সেতু চালু হওয়ার খবরে দুধিয়া , মিরিক , সুখিয়াপোখরি ও আশপাশের এলাকার মানুষ প্রবল স্বস্তি প্রকাশ করেছেন । স্থানীয় দোকানদার দীপঙ্কর রাই বলেন , সেতু ভেঙে যাওয়ার পর তাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । আজ নতুন সেতু চালু হওয়ায় মনে হচ্ছে , ফের জীবন ফিরে এসেছে ।
পূর্ত দপ্তরের এক আধিকারিক জানান , সেতুটি অস্থায়ী হলেও যথেষ্ট শক্তপোক্তভাবে তৈরি করা হয়েছে । বর্ষাকালে ক্ষয়রোধে অতিরিক্ত কংক্রিট লেয়ারিং ও প্রটেকশন ওয়াল তৈরি করা হবে।
বালাসনের তীরে দাঁড়িয়ে আজ ফের জেগে উঠেছে মানুষের আশা — দুধিয়ার এই নতুন সেতুই আজ পাহাড় ও সমতলের জীবনের সেতু বন্ধন।
